কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা, বর্তমানে কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বেশ ভালো। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে কুয়েত সব সময়ই বিদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য।
কুয়েতে-বাংলাদেশি-শ্রমিকের-চাহিদা
কুয়েতের বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিপুল সংখ্যক দক্ষ ও অদক্ষ শ্রমিকের প্রয়োজন, আর সেখানেই বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা তৈরি হয়।

পোস্ট সূচিপত্রঃ কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদার বর্তমান অবস্থা

বর্তমানে কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বেশ ভালো। বিশেষ করে কিছু নির্দিষ্ট খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের কদর রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ হিসেবে কুয়েত সব সময়ই বিদেশি শ্রমিকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় গন্তব্য। বর্তমানে কুয়েতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ প্রকল্পের কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়।

বিশেষ করে কারিগরি দক্ষতা সম্পন্ন শ্রমিকদের চাহিদা অনেক বেশি হবে। তাই, যারা কুয়েতে যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে করে তারা তুলনামূলকভাবে ভালো বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা পাবেন।

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা নির্দিষ্ট কিছু খাতে বিশেষভাবে লক্ষণীয়। এই খাতগুলো দেশটির অর্থনীতির মেরুদণ্ড হিসেবে কাজ করে। যেসব খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা বেশি তা নিচে বিস্তারিত উল্লেখ করা হলঃ

১. নির্মাণ খাতঃ কুয়েতের সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ খাতগুলোর মধ্যে এটি অন্যতম। নতুন নতুন রাস্তা, হাইওয়ে, বিমানবন্দর, বন্দর, হাসপাতাল, স্কুল এবং আবাসিক ভবন নির্মাণ হচ্ছে। এসব প্রকল্পের জন্য বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের প্রয়োজন। বাংলাদেশি শ্রমিকরা এই খাতে তাদের দক্ষতার জন্য সুপরিচিত। রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, রড মিস্ত্রি, রংমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার এবং সাধারণ শ্রমিকের মতো বিভিন্ন পদে তাদের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বাংলাদেশের অনেক শ্রমিক আছেন যারা দেশে থেকেই নির্মাণ কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করে কুয়েতে যান এবং সেখানে ভালো আয় করেন। কুয়েত সরকার সম্প্রতি বেশ কিছু মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে, যেমন নতুন কুয়েত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং সিল্ক সিটি প্রজেক্ট, যা এই খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা আরও বাড়িয়ে দেবে বলে আশা করা যায়। ২. পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা খাতঃ কুয়েতের শহরগুলোর সৌন্দর্য এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার জন্য অসংখ্য বিদেশি শ্রমিক কাজ করেন। শপিং মল, অফিস, হোটেল, হাসপাতাল, স্কুল এবং অন্যান্য পাবলিক স্থানে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার কাজে প্রচুর বাংলাদেশি শ্রমিক নিয়োজিত আছেন। এই খাতটি অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য একটি বড় সুযোগ তৈরি করে। এই কাজগুলো শারীরিক পরিশ্রমের হলেও এর চাহিদা স্থিতিশীল এবং সারা বছরই থাকে। ৩. রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল খাতঃ কুয়েতের রেস্টুরেন্ট এবং হোটেলগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ কাজ করে। রান্না, খাবার পরিবেশন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং ব্যবস্থাপনার মতো কাজগুলোতে বাংলাদেশিরা দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের প্রমাণ করছেন। রেস্টুরেন্ট এবং হোটেল খাতের প্রসার হওয়ায় এই পেশাগুলোতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

৪. কৃষি খাতঃ যদিও কুয়েত একটি মরুভূমির দেশ, তবুও কিছু কৃষি খামার রয়েছে যেখানে ফল, সবজি এবং পশুপালন করা হয়। এসব খামারে কাজ করার জন্য বিদেশি শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। বাংলাদেশি শ্রমিকরা কৃষি কাজে পারদর্শী হওয়ায় এই খাতে তাদের কদর আছে।


৫. ব্যক্তিগত পরিষেবাঃ অনেক কুয়েতি পরিবার তাদের বাড়িতে কাজ করার জন্য বিদেশি কর্মী নিয়োগ দেয়। এই কাজের মধ্যে বাড়ির পরিচ্ছন্নতা, রান্না, শিশুদের যত্ন নেওয়া এবং অন্যান্য গৃহস্থালী কাজ অন্তর্ভুক্ত। এই খাতেও বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি বড় অংশ কাজ করে।


৬. অন্যান্য পেশা: উপরোক্ত খাতগুলো ছাড়াও ড্রাইভিং, ডেলিভারি সার্ভিস, টেক্সটাইল, গ্যারেজ এবং ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানেও বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা রয়েছে। দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার, এসি মেকানিক এবং ওয়েল্ডারের মতো কারিগরি পেশাজীবীদের জন্য কুয়েতে ভালো সুযোগ রয়েছে।

কুয়েতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা

কুয়েতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশি শ্রমিকদের একটি গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান আছে। বিভিন্ন নির্মাণ প্রকল্প, সেবা খাত এবং কৃষি খাতে বাংলাদেশের শ্রমিকরা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন।

মূলত, খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় এবং শ্রমিকরা কঠোর পরিশ্রমী হওয়ায় নিয়োগকর্তারা বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগ দিতে আগ্রহী হন। বিশেষ করে, নির্মাণ, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা, রেস্টুরেন্ট এবং কৃষি খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের ব্যাপক চাহিদা দেখা যায়।

কুয়েতের-শ্রমবাজারে-বাংলাদেশি-শ্রমিকদের-চাহিদা

বাংলাদেশ থেকে কুয়েতে জনশক্তি রপ্তানির ইতিহাস বেশ পুরোনো। ১৯৭০-এর দশক থেকে শুরু হওয়া এই সম্পর্ক এখন আরও গভীর হয়েছে। বর্তমানে, কুয়েতে বিভিন্ন পেশা ও খাতে কর্মরত বাংলাদেশি প্রবাসীর সংখ্যা প্রায় ৩ লক্ষের বেশি। এই বিপুল সংখ্যক শ্রমিকের উপস্থিতিই প্রমাণ করে যে কুয়েতের শ্রমবাজারে বাংলাদেশের একটি শক্তিশালী অবস্থান আছে।


মূলত, বাংলাদেশি শ্রমিকদের নিয়োগের পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ কাজ করে। যেমন—
  • অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় নিয়োগকর্তারা তাদের নিয়োগ দিতে বেশি আগ্রহী হন।
  • বাংলাদেশি শ্রমিকরা সাধারণত কঠোর পরিশ্রমী এবং যেকোনো পরিবেশে মানিয়ে নিতে পারদর্শী। কুয়েতের মতো উষ্ণ জলবায়ুর দেশেও তারা দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে।
  • বিভিন্ন খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের সততা এবং বিশ্বস্ততা দেশটিতে একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি করেছে, যার ফলে নিয়োগকর্তারা তাদের প্রতি আস্থা রাখেন।

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা কেন বেশি?

বর্তমানে কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বেশ ভালো এবং এর পেছনে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কারণ রয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম ধনী দেশ কুয়েত তাদের নিজস্ব অর্থনীতি পরিচালনা এবং বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিদেশি শ্রমিকের ওপর ব্যাপকভাবে নির্ভরশীল।


এই ক্ষেত্রে বাংলাদেশি শ্রমিকরা তাদের পরিশ্রম, দক্ষতা এবং তুলনামূলকভাবে কম খরচের কারণে কুয়েতের শ্রমবাজারে একটি শক্তিশালী অবস্থান তৈরি করেছে। কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার পেছনে কয়েকটি প্রধান কারণ রয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতি এবং শ্রমবাজারের চাহিদার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা বেশি হওয়ার বেশ কয়েকটি কারণ রয়েছেঃ ১. কম মজুরিঃ অন্যান্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলকভাবে কম। কুয়েতের নিয়োগকর্তারা তাদের প্রজেক্টের খরচ কমাতে আগ্রহী থাকেন। তাই, কম খরচে একজন দক্ষ ও পরিশ্রমী শ্রমিক পাওয়া গেলে তারা তাকেই নিয়োগ দিতে বেশি পছন্দ করেন। ২. কঠোর পরিশ্রমীঃ বাংলাদেশি শ্রমিকরা সাধারণত কঠোর পরিশ্রমী এবং যেকোনো প্রতিকূল পরিবেশে কাজ করতে প্রস্তুত থাকে। কুয়েতের মতো উষ্ণ জলবায়ুর দেশে নির্মাণ, কৃষি এবং অন্যান্য আউটডোর কাজে শ্রমিকদের শারীরিক সক্ষমতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশি শ্রমিকরা এই ধরনের কঠোর পরিশ্রমের জন্য পরিচিত এবং যেকোনো পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারে। ৩. বিভিন্ন খাতে দক্ষতাঃ বাংলাদেশি শ্রমিকরা বিভিন্ন পেশায় পারদর্শী। নির্মাণ খাতের রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি, ইলেকট্রিশিয়ান, প্লাম্বার থেকে শুরু করে রেস্টুরেন্ট, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং কৃষি খাতেও তাদের দক্ষতা রয়েছে। এই বহুমুখী দক্ষতা নিয়োগকর্তাদের আকৃষ্ট করে। ৪. ইতিবাচক সুনামঃ কুয়েতে দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশি শ্রমিকরা কাজ করছেন এবং তাদের সততা, বিশ্বস্ততা ও নিষ্ঠার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের একটি ইতিবাচক ভাবমূর্তি তৈরি হয়েছে। যখন একজন নিয়োগকর্তা একজন বাংলাদেশি শ্রমিককে নিয়োগ দেন, তখন তিনি সাধারণত নির্ভরযোগ্যতা এবং ভালো কাজের প্রত্যাশা করেন। ৫. কুয়েতের মেগা প্রকল্পঃ কুয়েত সরকার বর্তমানে তাদের অর্থনীতিকে তেল-নির্ভরতা থেকে বহুমুখী করার জন্য বড় বড় অবকাঠামো প্রকল্প হাতে নিয়েছে। নতুন শহর, হাইওয়ে, বিমানবন্দর এবং অন্যান্য স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। এই ধরনের মেগা প্রকল্পের জন্য প্রচুর শ্রমিকের প্রয়োজন, আর এই চাহিদা পূরণে বাংলাদেশি শ্রমিকরা একটি বড় ভূমিকা পালন করছে। ৬. জনসংখ্যার স্বল্পতাঃ কুয়েতের স্থানীয় জনসংখ্যা খুবই কম। দেশটির প্রায় প্রতিটি অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাত বিদেশি শ্রমিকদের ওপর নির্ভরশীল। এই নির্ভরশীলতা আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা করা যায়, যার ফলে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা কমবে না। ৭. সরকারের নীতিঃ কুয়েত সরকার বিভিন্ন দেশের জন্য শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি কোটা ব্যবস্থা অনুসরণ করে। বাংলাদেশের সাথে কুয়েতের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এবং শ্রমিকদের সুনাম এই কোটা বজায় রাখতে সাহায্য করে।

কুয়েতে কর্মসংস্থানের প্রক্রিয়া এবং সতর্কতা

কুয়েতে যাওয়ার জন্য বৈধ এবং সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি। অবৈধ পথে গেলে টাকা ও জীবন দুটোই ঝুঁকির মুখে পড়ে। কুয়েতে কাজ করতে হলে একটি বৈধ কাজের ভিসা প্রয়োজন, যা কুয়েতের একজন নিয়োগকর্তার মাধ্যমে পাওয়া যায়। এই নিয়োগকর্তাকে অবশ্যই কুয়েতের শ্রম মন্ত্রণালয় থেকে লাইসেন্সপ্রাপ্ত হতে হবে।

বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক পাঠানোর জন্য জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো একটি নির্ভরযোগ্য মাধ্যম। বিএমইটি-এর মাধ্যমে নিবন্ধন করলে প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমে। অনেক সময় অসাধু দালাল বা মানব পাচারকারী মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে অবৈধ পথে কুয়েত পাঠানোর চেষ্টা করে। 
কুয়েতে-কর্মসংস্থানের-প্রক্রিয়া-এবং-সতর্কতা
তারা উচ্চ বেতনের প্রতিশ্রুতি দেয়, কিন্তু বাস্তবে শ্রমিকরা সেখানে গিয়ে কোনো কাজ পায় না বা তাদের বেতন কম দেওয়া হয়। তাই, যেকোনো চাকরির জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই সরকারি নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং বিএমইটি-এর মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে।

কর্মসংস্থানের জন্য চুক্তিপত্রে কী কী শর্ত আছে, তা ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত। বেতন, কাজের ধরন, থাকার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য সুবিধা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা থাকা জরুরি। কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকলেও কিছু বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরি। কিছু অসাধু দালাল বা মানব পাচারকারী মিথ্যা প্রলোভন দেখিয়ে মানুষকে অবৈধ পথে কুয়েত পাঠানোর চেষ্টা করে। 

এতে অনেক সময় শ্রমিকরা প্রতারিত হন এবং তাদের অর্থ ও শ্রম দুটোই নষ্ট হয়। তাই, যেকোনো চাকরির জন্য আবেদন করার আগে অবশ্যই সরকারি নিয়ম মেনে চলতে হবে এবং বিএমইটি-এর মাধ্যমে যাচাই করে নিতে হবে।

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যা

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের চাহিদা থাকলেও কিছু চ্যালেঞ্জও রয়েছেঃ কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য অনেক সুযোগ থাকলেও তাদের কিছু গুরুতর চ্যালেঞ্জ এবং সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এই সমস্যাগুলো তাদের জীবনযাপন এবং কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। চলুন, এই চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক। ১. কম বেতন এবং বেতন বকেয়া থাকাঃ কুয়েতে কিছু অসাধু নিয়োগকর্তা শ্রমিকদের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী বেতন দেন না। অনেক সময় বেতন দিতে দেরি করেন বা বকেয়া রাখেন। এতে শ্রমিকদের পরিবারে টাকা পাঠানো এবং নিজেদের খরচ চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকরা বাধ্য হয়ে কম বেতনে কাজ করেন, যা তাদের প্রত্যাশার চেয়ে অনেক কম। ২. অতিরিক্ত কাজের চাপ এবং অস্বাস্থ্যকর পরিবেশঃ কিছু খাতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের অতিরিক্ত কাজের চাপ দেওয়া হয়। দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, সাপ্তাহিক ছুটি না থাকা এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে কাজ করতে বাধ্য করা হয়। বিশেষ করে নির্মাণ এবং কৃষি খাতে এই সমস্যা বেশি দেখা যায়। এছাড়াও, গরম আবহাওয়ায় পর্যাপ্ত পানি বা বিরতি না পাওয়ায় শ্রমিকদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। ৩. নিম্নমানের আবাসন সুবিধাঃ অনেক শ্রমিককে অস্বাস্থ্যকর এবং অপরিসর আবাসনে থাকতে হয়। ছোট একটি ঘরে অনেক শ্রমিককে গাদাগাদি করে থাকতে হয়, যা তাদের স্বাস্থ্য এবং ব্যক্তিগত নিরাপত্তার জন্য হুমকি। মৌলিক সুবিধা যেমন পর্যাপ্ত পানি, বিদ্যুৎ এবং পরিচ্ছন্নতার অভাব প্রায়ই দেখা যায়। ৪. ভিসার মেয়াদ এবং আইনি জটিলতাঃ কিছু নিয়োগকর্তা শ্রমিকদের ভিসার মেয়াদ সময়মতো নবায়ন করেন না, যার ফলে শ্রমিকরা অবৈধ হয়ে পড়েন। অবৈধ অবস্থায় ধরা পড়লে তাদের জেল এবং জরিমানা হতে পারে। এছাড়াও, যদি কোনো নিয়োগকর্তা শ্রমিকদের পাসপোর্ট আটকে রাখেন, তাহলে তারা চাইলেও চাকরি পরিবর্তন করতে বা দেশে ফিরতে পারেন না।


৫. মানব পাচারকারীদের হাতে প্রতারিত হওয়াঃ অনেক শ্রমিক দালাল বা মানব পাচারকারীদের মাধ্যমে কুয়েতে যান। তারা উচ্চ বেতনের মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয়। কুয়েতে পৌঁছানোর পর শ্রমিকরা বুঝতে পারেন যে তাদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি সম্পূর্ণ মিথ্যা ছিল এবং তাদের জন্য কোনো ভালো কাজ নেই। এতে তারা অর্থ, সময় এবং সম্মান হারান।

৬. ভাষার প্রতিবন্ধকতাঃ অনেক বাংলাদেশি শ্রমিক কুয়েতের স্থানীয় ভাষা আরবিতে পারদর্শী নন। এর ফলে তারা নিয়োগকর্তা বা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন না, যা বিভিন্ন সমস্যা তৈরি করে। ভাষার কারণে তারা অনেক সময় তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারেন না।

কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য সুযোগ থাকলেও, তাদের এই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হয়। এই সমস্যাগুলো এড়াতে হলে অবশ্যই বৈধ পথে এবং সরকারের নির্ধারিত নিয়ম অনুযায়ী বিদেশে যাওয়া উচিত।

শেষ কথাঃ কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকের চাহিদা

পরিশেষে, কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকদের জন্য ভালো সুযোগ রয়েছে এবং এই চাহিদা ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলে আশা করা যায়। তবে, এই সুযোগ কাজে লাগাতে হলে অবশ্যই বৈধ পথে এবং সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে। যারা কুয়েতে যেতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য পেশাগত প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং নির্দিষ্ট কাজে দক্ষতা অর্জন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।


এতে তারা তুলনামূলকভাবে ভালো বেতন এবং সুযোগ-সুবিধা পাবেন। পাশাপাশি, দালালদের থেকে সতর্ক থাকা এবং সরকারের নিয়ম মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। সঠিক পরিকল্পনা এবং প্রস্তুতি থাকলে কুয়েতে বাংলাদেশি শ্রমিকরা শুধু নিজেদের জীবনই নয়, দেশের অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে পারে।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

এ এস এম ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url