তীব্র গরম থেকে বাঁচার ৯ টি গোপন উপায়
তীব্র গরমে মানুষের অস্বস্তির শেষ নেই। দেখা দেয় নানা রকম রোগব্যাধি, যার মধ্যে
সবচেয়ে গুরুতর হলো হিটস্ট্রোক। এছাড়াও অনেকের বদহজম বা অন্যান্য শারীরিক সমস্যা
দেখা দেয়। আসলে এই তীব্র গরমে অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি থাকে যারা বেশি
পরিশ্রম করেন।
চলুন জেনে নেই, অতিরিক্ত গরমে কিভাবে সুস্থ থাকা যায়। নিচে তীব্র গরম থেকে বাঁচার
৯ টি গোপন উপায় দেওয়া হলো। যা আপনাকে অতিরিক্ত গরমে থেকে প্রশান্তি দেবে।
পোষ্ট সূচিপত্রঃ তীব্র গরম থেকে বাঁচার ৯ টি গোপন উপায়
- শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখুন
- পোশাক নির্বাচনে মনোযোগ দিন
- গোসলের সময় একটু বুদ্ধি খাটান
- ঘরে ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন
- মশলাদার খাবারকে না বলুন
- ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করুন
- রোদ এড়িয়ে চলুন
- পুদিনা পাতার ম্যাজিক
- শরীরের কথা শুনুন
- অতিরিক্ত গরমে কি কি সমস্যা হয়
- শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ
- শরীর গরম থাকা কিসের লক্ষণ
- হঠাৎ গরম লাগার কারণ
- প্রচন্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার উপায়
- শেষ কথাঃ তীব্র গরম থেকে বাঁচার ৯ টি গোপন উপায়
তীব্র গরম থেকে বাঁচার ৯ টি গোপন উপায়
তীব্র গরমে হাঁসফাঁস করাটা আমাদের সবার কাছেই খুব পরিচিত একটা অভিজ্ঞতা। এই
সময়টাতে শরীরকে সুস্থ রাখাটা এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। আমরা সাধারণত পানি পান করা
বা হালকা কাপড় পরার মতো কিছু সাধারণ উপায় জানি। কিন্তু গরম থেকে বাঁচার কিছু
গোপন কৌশল আছে, যেগুলো জানলে এই তীব্র গরম থেকেও বেশ স্বস্তি পাওয়া সম্ভব।
চলুন, বিস্তারিত জেনে নিই এমন ৯টি দারুণ উপায়।
শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখুন
বাইরে থেকে শরীরকে ঠান্ডা রাখার আগে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখা জরুরি। এর জন্য
সবচেয়ে ভালো হলো প্রচুর পরিমাণে পানি, ডাবের পানি বা লেবুপানি পান করা। মনে
রাখতে হবে, শরীরকে হাইড্রেটেড রাখার জন্য তৃষ্ণা না পেলেও পানি পান করতে হবে।
আরো পড়ুনঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সেরা খাদ্য তালিকা
বাজারের চিনিযুক্ত জুস বা কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন, কারণ এগুলো শরীরকে
সাময়িকভাবে ঠান্ডা দেখালেও আসলে তাপমাত্রা বাড়িয়ে দেয়। তার বদলে ঘরে তৈরি
বেলের শরবত বা পুদিনা-লেবুর শরবত পান করতে পারেন, যা প্রাকৃতিকভাবে শরীরকে
ঠান্ডা রাখে।
পোশাক নির্বাচনে মনোযোগ দিন
পোশাকের ব্যাপারে শুধু পাতলা কাপড় পরলেই হবে না, বরং কাপড়ের ধরন এবং রঙও
গুরুত্বপূর্ণ। সুতির মতো প্রাকৃতিক তন্তুর কাপড় বেছে নিন, কারণ এটি ঘাম শোষণ
করে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। সিনথেটিক বা পলিয়েস্টার কাপড় ঘাম ধরে
রাখে, ফলে অস্বস্তি বাড়ে।
পোশাকের রঙও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; গাঢ় রঙের বদলে সাদা বা হালকা রঙের পোশাক
পরুন, কারণ হালকা রঙ সূর্যের তাপ শোষণ না করে প্রতিফলিত করে। ঢিলেঢালা পোশাক
পরাও জরুরি, এতে শরীরে বাতাস চলাচল করতে পারে।
গোসলের সময় একটু বুদ্ধি খাটান
তীব্র গরম থেকে এসে শরীর যখন খুব উত্তপ্ত থাকে, তখন একদম বরফ ঠান্ডা পানি দিয়ে
গোসল করা উচিত নয়। এতে শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে কমে যায়, যা শরীরের জন্য
ভালো নয়।
এর বদলে ঠান্ডা বা হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। গোসলের পর শরীর পুরোপুরি না
মুছে হালকা ভেজা রাখুন, এতে শরীর ধীরে ধীরে ঠান্ডা হবে। দিনের মধ্যে কয়েকবার
হাত-মুখ ধোয়ার বা গোসল করার অভ্যাস করলে শরীর বেশ সতেজ থাকবে।
ঘরে ঠাণ্ডা রাখার চেষ্টা করুন
ঘরে থেকেও গরম থেকে বাঁচা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। দিনের বেলায় যখন সূর্যের তাপ
বেশি থাকে, তখন ঘরের সব জানালা এবং পর্দা টেনে রাখুন। এতে গরম বাতাস ঘরে ঢুকতে
পারবে না। সন্ধ্যার দিকে জানালাগুলো খুলে দিন, যাতে বাইরের ঠান্ডা বাতাস ঘরে
প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া একটি পাত্রে বরফ বা ঠান্ডা পানি নিয়ে ফ্যানের সামনে
রাখলে ফ্যানের বাতাস ঘরের তাপমাত্রা কমাতে সাহায্য করবে।
মশলাদার খাবারকে না বলুন
গরমের সময় আমাদের হজমশক্তি কিছুটা দুর্বল থাকে। তাই অতিরিক্ত তেল-মশলাযুক্ত বা
ভারী খাবার যেমন বিরিয়ানি বা তেহারি হজম করতে শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়,
ফলে দেহের তাপমাত্রা বাড়ে। এর বদলে হালকা খাবার, ফলমূল, সালাদ, এবং দই খান। এই
খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে পানি থাকে, যা শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে
সাহায্য করে।
ভেজা তোয়ালে ব্যবহার করুন
এই কৌশলটি তাৎক্ষণিক আরাম পাওয়ার জন্য দারুণ। যখন খুব গরম লাগবে, তখন একটি
পরিষ্কার ভেজা তোয়ালে ঘাড়ে, কপালে বা কব্জিতে রাখুন। এই স্থানগুলোতে
রক্তনালীগুলো ত্বকের খুব কাছাকাছি থাকে, তাই ভেজা তোয়ালে রাখলে দ্রুত রক্ত
ঠান্ডা হয় এবং সেই ঠান্ডা রক্ত পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এটি শরীরের তাপমাত্রা
দ্রুত কমাতে সাহায্য করে এবং আপনি বেশ স্বস্তি পাবেন।
রোদ এড়িয়ে চলুন
গরমের দিনে সুস্থ থাকতে হলে দিনের রুটিনে কিছুটা পরিবর্তন আনতে হয়। সকাল ১০টা
থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এই সময় সূর্যের
তাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। যদি বের হতেই হয়, তবে অবশ্যই ছাতা ব্যবহার করুন এবং
ঢিলেঢালা পোশাক পরুন। ভারী কাজ বা ব্যায়ামের মতো শারীরিক পরিশ্রম দিনের
সবচেয়ে ঠান্ডা সময়, অর্থাৎ ভোরবেলা বা সন্ধ্যার পর করুন।
পুদিনা পাতার ম্যাজিক
পুদিনা পাতার রয়েছে প্রাকৃতিক ঠান্ডা করার গুণ। গরমের দিনে এক গ্লাস লেবুপানি
বা শরবতে কয়েকটি পুদিনা পাতা ছেঁচে মিশিয়ে পান করুন। পুদিনা পাতা শুধু যে
শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখে তা নয়, এটি হজমেও সাহায্য করে এবং মনকে সতেজ করে
তোলে।
শরীরের কথা শুনুন
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গোপন কৌশল হলো আপনার শরীরের কথা শোনা। কখনো কখনো শরীর
অতিরিক্ত গরম হলে আমাদের মাথা ঘোরা, দুর্বল লাগা বা বমি বমি ভাব হতে পারে।
এগুলো হিট এক্সহশন বা হিট স্ট্রোকের প্রাথমিক লক্ষণ হতে পারে। এমনটা হলে সঙ্গে
সঙ্গে কোনো ঠান্ডা জায়গায় আশ্রয় নিন, প্রচুর পানি পান করুন এবং বিশ্রাম নিন।
আরো পড়ুনঃ
কিসমিস ও মধু খাওয়ার উপকারিতা
গরমের এই দিনগুলোতে একটু সচেতন থাকলে এবং এই সহজ টিপসগুলো মেনে চললে আপনি অনেকটাই
আরাম পাবেন। আসলে তীব্র গরম থেকে বাঁচার কোনো গোপন কৌশল নেই, আছে শুধু কিছু
সাধারণ কাজকে একটু বুদ্ধি খাটিয়ে করা। নিজেকে সুস্থ রাখাটা সবার আগে জরুরি।
অতিরিক্ত গরমে কি কি সমস্যা হয়
অতিরিক্ত গরমে আমাদের সবারই কমবেশি কষ্ট হয়। কিন্তু এই গরমের কিছু গুরুতর
সমস্যা আছে যা অনেক সময় আমরা খেয়াল করি না। মূলত, আমাদের শরীর যখন নিজেকে
ঠান্ডা করতে পারে না, তখনই এই সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
প্রচুর গরমে আমাদের শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে অনেক বেশি পানি ও লবণ বের হয়ে যায়।
এর ফলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তখন মাথা ঘোরা, বমি বমি ভাব, শরীর দুর্বল লাগা
বা মাংসপেশিতে টান ধরার মতো সমস্যা হয়। এই অবস্থায় ঠিকমতো পানি না খেলে আরও
বড় বিপদ হতে পারে।
অতিরিক্ত গরমের সবচেয়ে ভয়ংকর দুটি সমস্যা হলো হিট এক্সহশন এবং হিট স্ট্রোক।
হিট এক্সহশন মূলত শরীরে অতিরিক্ত ক্লান্তি ও দুর্বলতার কারণে হয়। এর লক্ষণগুলো
হলো: প্রচুর ঘাম হওয়া, ত্বক ঠান্ডা ও ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া, মাথা ব্যথা, বমি,
এবং দ্রুত হৃদস্পন্দন। এই অবস্থায় বিশ্রাম নিলে এবং প্রচুর পানি পান করলে
সাধারণত সুস্থ হওয়া যায়।
হিট স্ট্রোক একটি জরুরি অবস্থা এবং খুবই মারাত্মক। যখন শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত
অনেক বেড়ে যায়, তখন এটি ঘটে। হিট স্ট্রোকের লক্ষণগুলো হলো: ঘাম বন্ধ হয়ে
যাওয়া, ত্বক গরম ও লাল হয়ে যাওয়া, প্রচণ্ড মাথা ব্যথা, জ্ঞান হারানো, এবং
খিঁচুনি। এমন লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া উচিত।
অতিরিক্ত গরমে ত্বকেরও অনেক সমস্যা হয়। ঘামের কারণে শরীরে ঘামাচি বা র্যাশ
দেখা দেয়। এছাড়া, সূর্যের তীব্র তাপে সানবার্ন হতে পারে, যার ফলে ত্বক লাল
হয়ে যায় এবং জ্বালা করে। শরীর অতিরিক্ত গরম হলে মনটাও অস্থির হয়ে যায়।
মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, কোনো কিছুতে মনোযোগ দিতে না পারা, এবং রাতে ঘুমাতে
সমস্যা হওয়া—এগুলোও অতিরিক্ত গরমের কারণে হতে পারে।
এজন্য গরমে সবসময় সাবধানে থাকতে হয়। বেশি বেশি পানি পান করা এবং শরীর ঠান্ডা
রাখার চেষ্টা করা খুব জরুরি।
শরীরে অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ
আমাদের শরীর অতিরিক্ত গরম লাগলে বুঝতে হবে, শরীর ভেতর থেকে কোনো সংকেত দিচ্ছে।
সাধারণত, আমাদের শরীর ঘামের মাধ্যমে নিজেকে ঠান্ডা রাখে। কিন্তু যখন এই
প্রক্রিয়া সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না, তখন শরীর গরম লাগে। এর কয়েকটি প্রধান
কারণ হলো:
যখন বাইরের তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে, তখন আমাদের শরীর স্বাভাবিকভাবেই গরম
অনুভব করে। বাতাসে যদি আর্দ্রতা বেশি থাকে, তাহলে ঘাম সহজে শুকায় না। ফলে শরীর
ঠান্ডা হতে পারে না এবং অতিরিক্ত গরম লাগে।
আরো পড়ুনঃ
সকালে খালি পেটে ব্যায়াম করা যাবে কি?
যদি আমরা পর্যাপ্ত পানি না খাই, তাহলে শরীর প্রয়োজনীয় ঘাম তৈরি করতে পারে না।
এতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং গরম লাগে। আবার যখন আমরা বেশি পরিশ্রম
করি, তখন শরীরের ভেতরে তাপ তৈরি হয়। যদি শরীর সেই তাপ দ্রুত কমাতে না পারে,
তাহলে গরম লাগতে শুরু করে।
কিছু কিছু খাবার রয়েছে, যেমন অতিরিক্ত মশলাদার বা ভারী খাবার খেলে হজম
প্রক্রিয়ার সময় শরীরে তাপ তৈরি হয়, যার ফলে গরম লাগে। অনেক সময় জ্বর হলে বা
থাইরয়েডের মতো কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণেও শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে যেতে
পারে। অনেক সময় কিছু ঔষধ সেবনের কারণেও এমনটা হয়।
এইসব কারণের পাশাপাশি হরমোনের পরিবর্তন, যেমন মেনোপজের সময় বা গর্ভধারণের
সময়ও অনেক নারীর শরীর অতিরিক্ত গরম লাগতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরম লাগার কারণ
খুঁজে বের করা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া খুব জরুরি।
শরীর গরম থাকা কিসের লক্ষণ
শরীর গরম লাগাটা আমাদের শরীরের একটি সংকেত। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।
সহজভাবে বলতে গেলে, আমাদের শরীর যখন তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা ধরে রাখতে পারে
না, তখনই এই অনুভূতি হয়। এর কয়েকটি প্রধান কারণ নিচে আলোচনা করা হলো।
শরীর গরম থাকার সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো জ্বর। যখন আমাদের শরীরে কোনো সংক্রমণ
বা জীবাণু প্রবেশ করে, তখন শরীর সেগুলোকে প্রতিরোধের জন্য তাপমাত্রা বাড়িয়ে
দেয়। এটি শরীরের একটি স্বাভাবিক প্রতিরক্ষা প্রক্রিয়া। তাই জ্বরকে সাধারণত
একটি অসুস্থতার লক্ষণ হিসেবে ধরা হয়।
বাইরের আবহাওয়া যখন খুব গরম থাকে বা বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকে, তখন আমাদের
শরীর স্বাভাবিকভাবেই গরম হয়ে যায়। সূর্যের সরাসরি তাপে বেশিক্ষণ থাকলেও এমনটা
হতে পারে। এক্ষেত্রে, শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা বাড়ে না, কিন্তু বাইরে থেকে তাপ
শোষণ করার কারণে গরম লাগে।
আমরা যখন বেশি পরিশ্রম করি বা ব্যায়াম করি, তখন আমাদের পেশীগুলো তাপ তৈরি করে।
এই তাপের কারণে শরীরের তাপমাত্রা সাময়িকভাবে বেড়ে যায়। শরীর ঘামের মাধ্যমে
এই অতিরিক্ত তাপ বের করে দেওয়ার চেষ্টা করে।
পর্যাপ্ত পানি না খেলে শরীর পানিশূন্য হয়ে পড়ে। তখন শরীর ঠিকমতো ঘাম তৈরি
করতে পারে না, ফলে অতিরিক্ত তাপ বের হতে পারে না এবং শরীর গরম লাগে।
কিছু কিছু শারীরিক সমস্যার কারণেও শরীর গরম লাগতে পারে, যেমন:
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা শরীরের হরমোনকে প্রভাবিত করে, যার ফলে শরীরের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে।
- কিছু হরমোনের পরিবর্তনের কারণে (যেমন মেনোপজ বা থাইরয়েডের সমস্যা) শরীর গরম লাগতে পারে।
- কিছু ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবেও শরীর গরম লাগতে পারে।
শরীর গরম লাগাটা একটি লক্ষণ মাত্র। যদি এটি জ্বরের সাথে সম্পর্কিত হয়, তবে
অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে। আর যদি উপরের অন্য কোনো কারণে হয়, তবে কারণ অনুযায়ী
ব্যবস্থা নিলে সহজেই আরাম পাওয়া যায়।
হঠাৎ গরম লাগার কারণ
হঠাৎ করে শরীর গরম লাগাটা একটা অদ্ভুত অনুভূতি। অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই মনে
হয় যেন শরীরের ভেতর থেকে তাপ বেরিয়ে আসছে। এর পেছনে বেশ কিছু কারণ থাকতে পারে।
সহজ ভাষায়, যখন আমাদের শরীরের ভেতরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণের প্রক্রিয়াটা হঠাৎ
করেই প্রভাবিত হয়, তখনই এমনটা হয়।
হঠাৎ গরম লাগার একটি বড় কারণ হলো মানসিক চাপ বা দুশ্চিন্তা। যখন আমরা খুব বেশি
চিন্তা করি বা ভয় পাই, তখন শরীরের ভেতরে কিছু হরমোন নিঃসরণ হয়। এর ফলে রক্ত
চলাচল বেড়ে যায় এবং হঠাৎ করে শরীর গরম লাগতে পারে। রাগ, লজ্জা বা উত্তেজনা
থেকেও এমনটা হয়।
কিছু কিছু খাবার বা পানীয় শরীরকে হঠাৎ গরম করে তোলে। যেমন: অতিরিক্ত ঝাল খেলে
শরীরের ভেতরে তাপমাত্রা বেড়ে যায়। আবার চা, কফি বা অ্যালকোহল পান করলে শরীরের
তাপমাত্রা সাময়িকভাবে বেড়ে যেতে পারে।
হঠাৎ করে কোনো ভারী কাজ করলে বা সিঁড়ি দিয়ে দৌড়ালে শরীর খুব দ্রুত গরম হয়ে
যায়। কারণ, তখন পেশীগুলো বেশি কাজ করে এবং তাপ তৈরি হয়। শরীর সেই তাপ বের করতে
না পারায় হঠাৎ গরম লাগে। হঠাৎ করে ঠান্ডা জায়গা থেকে খুব গরম জায়গায় গেলে
শরীরের তাপমাত্রা হঠাৎ করে বেড়ে যেতে পারে।
নারীদের ক্ষেত্রে মেনোপজের সময় বা মাসিক চক্রের সময় হঠাৎ গরম লাগার অনুভূতি
খুবই সাধারণ। এটি মূলত হরমোনের পরিবর্তনের কারণে হয়।
কিছু ক্ষেত্রে শরীর গরম থাকা বা হঠাৎ গরম লাগা কোনো অসুস্থতার লক্ষণ হতে পারে,
যেমন: জ্বর আসার আগে বা কোনো সংক্রমণের কারণে। যদি এমনটা প্রায়ই হয় বা এর
সাথে অন্য কোনো লক্ষণ থাকে, তাহলে অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে নেওয়া
ভালো।
প্রচন্ড গরমে শরীর ঠান্ডা রাখার উপায়
প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করাটা আমাদের সবার কাছেই খুব পরিচিত এক অভিজ্ঞতা। এই
সময়টাতে শরীরকে সুস্থ আর ঠান্ডা রাখাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। তবে কিছু সহজ
উপায় মেনে চললে এই গরম থেকেও বেশ স্বস্তি পাওয়া সম্ভব।
গরমে শরীর থেকে ঘামের মাধ্যমে প্রচুর পানি বেরিয়ে যায়। তাই শরীরকে
পানিশূন্যতা থেকে বাঁচাতে সারাদিন ধরে অল্প অল্প করে পানি পান করতে থাকুন। শুধু
পানি নয়, ডাবের পানি, লেবুপানি, বা ঘরে তৈরি ফলের শরবতও খেতে পারেন। বাইরে
থেকে কেনা চিনিযুক্ত কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
এই সময় ঢিলেঢালা, হালকা ও সুতির পোশাক পরুন। সুতির কাপড় ঘাম শোষণ করে শরীরকে
ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। গাঢ় রঙের বদলে সাদা বা হালকা রঙের পোশাক পরুন, কারণ
হালকা রঙ সূর্যের তাপ শোষণ না করে প্রতিফলিত করে।
গরম থেকে এসে সরাসরি খুব ঠান্ডা পানি দিয়ে গোসল করবেন না, এতে শরীরের
তাপমাত্রা হঠাৎ কমে যায়, যা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। এর বদলে ঠান্ডা বা
হালকা গরম পানি দিয়ে গোসল করুন। এতে শরীর সতেজ হবে।
তেল-মশলাযুক্ত ভারী খাবার হজম করতে শরীরকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়, ফলে দেহের
তাপমাত্রা বাড়ে। এই সময় হালকা খাবার, ফলমূল, সালাদ বা দই খেলে শরীর ঠান্ডা
থাকে।
সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত সরাসরি রোদে যাওয়া এড়িয়ে চলুন। কারণ এই
সময় সূর্যের তাপ সবচেয়ে বেশি থাকে। যদি বের হতেই হয়, তবে ছাতা বা টুপি
ব্যবহার করুন এবং ঢিলেঢালা পোশাক পরুন।
দিনের বেলায় যখন সূর্যের তাপ বেশি থাকে, তখন ঘরের জানালা এবং পর্দা টেনে
রাখুন। এতে গরম বাতাস ঘরে ঢুকতে পারবে না। সন্ধ্যার দিকে জানালা খুলে দিন, যাতে
বাইরের ঠান্ডা বাতাস ঘরে ঢুকতে পারে।
এই সহজ টিপসগুলো মেনে চললে আপনি গরমেও আরাম পাবেন। তবে যদি খুব বেশি অসুস্থ বোধ
করেন, তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
শেষ কথাঃ তীব্র গরম থেকে বাঁচার ৯ টি গোপন উপায়
পরিশেষে, আসলে তীব্র গরম থেকে বাঁচার কোনো গোপন কৌশল নেই। মূল কথা হলো, এই
সময়টাতে শরীরকে সুস্থ রাখতে সচেতন থাকতে হবে। ঠিকমতো পানি পান করা, হালকা
পোশাক পরা, আর ঘরের পরিবেশ ঠান্ডা রাখার মতো ছোট ছোট অভ্যাসগুলোই বড় পার্থক্য
গড়ে দেয়। নিজের শরীরের কথা শুনুন আর বুঝে শুনে চললে গরমের দিনগুলোও বেশ
স্বস্তিতে কাটানো সম্ভব।
এ এস এম ব্লগারের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url